সিলেট ২৭শে জানুয়ারি, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই মাঘ, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:৫০ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৭, ২০২১
শাহজাহান আলীঃরাজশাহী বিভাগীয় প্রধানঃ
কারেন্ট জালে যেভাবে মাছ আটকা পড়ে, ঠিক সেভাবেই মানুষ ধরার ফাঁদ বানিয়েছে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের দাদন ব্যবসায়ী মহাজনরা। তাদের সেই মানুষ ধরার ফাঁদের নাম কারেন্ট সুদ। সেই কারেন্ট সুদের ফাঁদে আটকা পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন অভাবী মানুষেরা। জুয়ার নেশার মতই কারেন্ট সুদের নেশা মানুষকে পথে বসাচ্ছে। একবার কেউ কারেন্ট সুদের ফাঁদে পড়লে তিনি সর্বশান্ত না হওয়া পর্যন্ত আর বের হতে পারেন না। এমনই এক মগের মুল্লুক কারেন্ট সুদের কারবারীদের স্বর্গরাজ্য শিবগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গুজিয়া বাজারের চালচিত্র উঠে এসেছে৷
কারেন্ট সুদ কাকে বলে ?
কারেন্ট শক লাগলে যেমন মানুষের সব রক্ত চুষে শেষ না করা পর্যন্ত ছাড়ে না,ঠিক তেমনি কারেন্ট সুদ মানুষকে সর্ব শান্ত না করে ছাড়ে না । এজন্যই এর নাম কারেন্ট সুদ। কারেন্ট সুদ মানে হাতে নাতে সুদ। ১ সপ্তাহ, ১ মাস কিংবা ১ বছর পর সুদ দিবেন তা নয়। সকালে টাকা নিবেন,সন্ধ্যায় সুদ দিবেন। তারই নাম কারেন্ট সুদ। ১ হাজার টাকার দৈনিক সুদ ৫০ টাকা। তার মানে সকালে ১ হাজার টাকা লোন নিলে সন্ধ্যায় সুদ দিতে হয় ৫০ টাকা। আপনি আসল ফেরত না দিলেও দৈনিক সুদের টাকা যে কোন ভাবেই শোধ করতে হয়। তা না হলে প্রতিদিন আসলের সঙ্গে যোগ হবে প্রতি হাজারে ৫০ টাকা।পরদিন এই সুদ আসলের আবার সুদ দিতে হবে। এই চক্রবৃদ্ধির কারেন্ট সুদের ফাঁদে একবার কেউ পড়লে সে আর বের হতে পারে না। কারেন্টের মত আটকে ধরে এই সুদের নেশা। এজন্যই এলাকার মানুষ আদর করে এই সুদের নাম নাম দিয়েছেন কারেন্ট সুদ।
কারেন্ট সুদের ব্যবসায়ী কারা ?
কারেন্ট সুদের ব্যবসায়ীরা সবাই সুদখোর কোটিপতি। শিবগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ও গুজিয়ার হাটে নামে বে নামে রেজিষ্ট্রেশন বিহীন সমিতি ও দাদন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। শিবগঞ্জ উপজেলার প্রায় বেশ কয়টি ইউনিয়নেই এই কারেন্ট সুদের কারবারিদের নেটওয়ার্ক আছে। এই সিন্ডিকেটের এতোটাই প্রভাব যে সেখানে অন্যকারো নাক গলানোর কোন সুযোগ নেই। সমাজের নেতা ফেতা সবাইকে তারা ম্যানেজ করে চলেন। কাজেই কথা বলার কেউ নেই। মানুষকে সর্বশান্ত করারও কোন প্রতিকারের ব্যবস্থা নেই। ভুক্তভোগীরা কেউ কোন কথাই বলতে চান না। কারেন্ট সুদের ফাঁদে পড়ে কয়েকজন আত্মহত্যা করলেও সেই তথ্য চেপে যাচ্ছেন স্বজনরা।ফলে কারেন্ট সুদের শেকড়ের তালাশ করতে গিয়ে সহজেই সব কিছু পাওয়া যায় না। নিজেরা এবং পরিবারের সদস্যদের নাম দিয়ে সমাজের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে তাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে সুদের ব্যবসা। তাদের সুদের হার প্রতি হাজারে প্রতিদিন ৫০ টাকা। এক দিন বা এক সপ্তাহ কেউ ঐ সুদের টাকা না দিতে পারলে মুল টাকার সাথে সুদের টাকা যোগ হয়ে সুদের পরিমাণ বেড়ে যাবে।
যেভাবে চলে কারেন্ট সুদের কারবার
কারেন্ট সুদের নিয়মকানুনও একেবারে ফোর ফোরটি কারেন্টের মত। কেউ মাসিক হারে তাদের কাছে থেকে সুদের টাকা নিতে গেলে তাকে দিতে হবে ফাঁকা চেক এবং ২০০ থেকে ৩০০ টাকার ননজুডিসিয়াল ষ্ট্যাম্প। পরবর্তীতে যাতে ঐসব স্ট্যাম্পে নিজের ইচ্ছামত টাকার পরিমান বসিয়ে স্ব স্ব ব্যাংক থেকে চেক ডিজ অনার করে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
সঞ্চয় সমিতির আড়ালে কারেন্ট সুদের ব্যবসা
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন সহ গুজিয়া হাটের দাদন ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষকে সর্বশান্ত করছে নানা উপায়ে। এলাকায় বিভিন্ন নামে বেনামে সঞ্চয় সমিতি গড়ে তুলে তার আড়ালে কারেন্ট সুদের ব্যবসা করছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে মোটা অংকের লাভ প্রদানের কথা বলে সঞ্চয় রাখতে উদবুদ্ধু করছে।
টাকার হিসাব,হিসাবের টাকা
দৈনিক সঞ্চয় জমাদানের ভিত্তিতে এলাকার ব্যবসায়ীদের এক বছর মেয়াদী সদস্য করে নিয়ে তাদের কাছ থেকে দৈনিক ১০/২০/৫০/১০০/২০০/৫০০/ টাকা হারে সঞ্চয় উঠানো হয়। সেই টাকা আবার ব্যবসায়ী বা অন্যান্য ব্যক্তিদের মাঝে কারেন্ট সুদে প্রদান করা হয়। এদের দৌরাত্য বন্ধ হচ্ছেই না।
কারেন্ট সুদে সংসার ভেঙ্গে যাওয়া এবং সুদের বোঝা টানতে না পেরে আত্মহত্যার মত কয়েকটি হৃদয়বিদারক ঘটনাও আছে। শিবগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ২০১৯ সালে খোকন মোহন্ত (৩২) পিতা- রবিয়া মোহন্ত গ্রাম- সাদুল্যাপুর সুদের টাকার চাপে বিষপানে আত্মহত্যা করেন, সম্প্রতি কয়েক মাস আগে সাদুল্যাপুর (বটতলা) গ্রামের শুটকু মিয়া(৪০) পিতাঃ কোরবান আলী, পেশাঃ ভ্যান চালক কারেন্ট সুদের টাকা পরিশোধ না করতে পেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন, একই গ্রামের কুমারপাড়ার মাখন পাল (৩৫) পিতাঃ নারায়ন চন্দ্র পাল পেশাঃ মৃৎশিল্পী সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে বাড়িঘড় ছেড়ে রাতের আঁধারে পালিয়ে যান। এইরকম অসংখ্য আরোও ব্যক্তি, পরিবার সর্বশান্ত হয়েছে এইসব নামে বেনামে সমিতি ও কারেন্ট সুদারুদের পাল্লায় পড়ে। এই ঘটনাগুলোর তথ্য জানার জন্য অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের তদারকি, ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
প্রধান উপদেষ্টাঃ মোঃ হেলাল আহমেদ চৌধুরী,প্রবীণ সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী (প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ফেইসবুক ফ্রেন্ডস ক্লাব বাংলাদেশ)
আইন বিষয়ক উপদেষ্টাঃ মোহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিকী( উজ্জ্বল) এডভোকেট (এ.পি.পি.)জজ কোর্ট সুনামগঞ্জ।
প্রধান সম্পাদকঃ মাশুক মিয়া ( যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী)সাধারন সম্পাদক
সুনামগঞ্জ সোসাইটি অব আমেরিকা ইনক, নিউ ইয়র্ক।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ ওয়াসিদ আকরাম (সিইও) বাংলার বারুদ ২৪.পত্রিকা
নির্বাহী সম্পাদকঃ মকবুল আলী ( যুক্তরাজ্য প্রবাসী) সদস্য, জাষ্টিস অফ ভয়েস ইউ ,কে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এম আব্দুল করিম (সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী)
পত্রিকার ডিজাইনারঃ মাওঃ খছরুজ্জামান ও মো.আব্দুল্লাহ আল যোবায়ের।